কমেছে উৎপাদন, নতুন মৌসুমে চা-পাতার দাম পাওয়ার স্বপ্ন চাষিদের

 


দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নীরব বিপ্লবে সিলেট-চট্টগ্রামের পর চায়ের তৃতীয় বৃহত্তম অঞ্চল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে উত্তরের পাঁচটি জেলা। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট দেশের চায়ের উৎপাদনের দিক থেকে টানা চতুর্থবারের মতো এবারও দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে। তবে কয়েক বছর ধরে নানা কারণে চা-পাতার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন চাষিরা। গেল মৌসুমে খরতাপের কারণে কমেছে চায়ের উৎপাদন। তবুও নতুন মৌসুমে চা উৎপাদন ও ন্যায্য মূল্য পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।

 

চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত মৌসুমে আবহাওয়াজনিত কারণে অতিরিক্ত খরা, কাঁচা চা-পাতার দাম না পেয়ে চাষিরা বাগান পরিচর্যায় অনেকটা অনীহা দেখিয়েছেন। অনেক চাষি হতাশাগ্রস্ত হয়ে কিছু বাগান নষ্ট করে ফেলার কারণে কমেছে উৎপাদন। আরেকদিকে কারখানার মালিকদের কাঁচা পাতা ক্রয়ের সময় কর্তনকৃত কাঁচা চা-পাতা এবং উৎপাদনকৃত চায়ের সঠিক হিসাব না দেখানোর কারণেও উৎপাদনের হিসাব কম পাওয়া গেছে।

কামাল হোসেন, আব্দুল করিম, হামিদসহ কয়েকজন ক্ষুদ্র চা চাষি বলেন, কয়েক বছর ধরে চা-পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। তবে গত বছর ১৭ টাকা দরে নিয়েছে। সার, কীটনাশক, মজুরি খরচ দিয়ে কয়েক বছর লোকসানই গুনতে হয়েছে। এ মৌসুমে নতুনভাবে চা নিয়ে  স্বপ্ন দেখছি। গত দুই মাস কারখানা বন্ধ ছিল। এ সময়ের মধ্যে বাগান পরিচর্যা করে নতুন পাতা উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। যেহেতু দেশে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, নতুন মৌসুমে যাতে আমাদের পাতার ন্যায্যমূল্যসহ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। এজন্য আমরা ভালো মানের পাতা সংগ্রহে কাজ শুরু করেছি।

২০০০ সালে বাণিজ্যিকভাবে পঞ্চগড়ে সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। গত বছর প্রচণ্ড খরতাপ ও বাগান মালিকদের চা-পাতার ন্যায্য মূল্য না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চলতি মৌসুমে গতবারের চেয়ে ৩৪ লাখ কেজি চা কম উৎপাদন হয়েছে। অপরদিকে চাষিরা বাগানের চা-পাতা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হাজার একর জমির চা বাগান নষ্ট করেছেন বাগান মালিকরা। নতুন মৌসুমে সব সংকট নিরসনসহ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে চা বোর্ড ও জেলা প্রশাসন। উত্তরের চা শিল্পাঞ্চলে চা-পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৮টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড়ের চা শিল্পকে আরও গতিশীল করার জন্য ‘টি সফট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’ অ্যাপ তৈরি করেছে।

চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, গত মৌসুমে জেলায় ১ কোটি ৭৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হলেও চলতি মৌসুমে তা কমেছে। কম হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে পাতার ন্যায্যমূল্য না দেওয়া, খরতাপ ও চোরাই পথে চা বিক্রি। অপরদিকে পঞ্চগড়ের চায়ের মান কীভাবে আরও ভালো করা যায় সে লক্ষ্যে সব সমস্যা-নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। ডিসেম্বরে মৌসুম শেষ হওয়ায় জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস প্রুনিংয়ের মধ্য দিয়ে নতুন মৌসুমে সুন্দর-গুণগত মানের চা পাতা পাওয়া যাবে। আশা করছি চাষিরা এ মৌসুমে ভালো দাম পাবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন