সৌ‌দিতে কর্মী যাওয়া অর্ধেকে নেমেছে



মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রম বাজার বন্ধের পর গত ছয় মাসে মূলত সৌদি আরবকে কেন্দ্র করেই চলছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি কর্মী যায় দেশটিতে। তবে গত মা‌সে হঠাৎ ক‌রে কর্মী যাওয়া অর্ধেকে নেমে আসে। কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন জটিলতায় দেশটিতে কর্মী পাঠানো কমছে বলে দাবি রিক্রুটিং এজেন্সির। 

সৌদি শ্রমবাজার নিয়ে তৈরি জটিলতা দূর করতে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন বায়রার সদস্যরা।


বৈঠক শেষে প্রবাসী কল‌্যাণ মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানান, বুধবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স‌ঙ্গে বৈঠক ক‌রে উপদেষ্টা করণীয় ঠিক করবেন।  বায়রা সদস্যরা বল‌ছেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ কর্মী যান ছোট ছোট চাহিদাপত্রের মাধ্যমে। মানে ১ থেকে ২৪টি পর্যন্ত চাহিদার মাধ্যমে। তাই দূতাবাসের সত্যায়ন জটিলতায় এখন ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া, মালয়েশিয়ায় গত সরকারের মেয়াদে এমপি-মন্ত্রীরা মিলে চক্র করে লুটতরাজ করেছেন। এবার যেন সেটি না হয়, সেই অনুরোধ করা হয়েছে। এবারের সরকার কোনোভাবেই চক্র তৈরিতে সহায়তা করবে না বলেই বিশ্বাস করেন বায়রার সদস্যরা।

বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ২৪টি পর্যন্ত নিয়োগপত্রের জন্য দূতাবাসের সত্যায়ন প্রয়োজন ছিল না, শুধু বিএমইটির সত্যায়ন নেওয়া হতো। সব কর্মীর সত্যায়ন করার মতো সক্ষমতা দূতাবাসের নেই। তাই হঠাৎ করে নিয়ম পরিবর্তন করায় কর্মী পাঠানো কমে গেছে। এ নিয়ম অব্যাহত থাকলে কর্মী পাঠানো আরও কমে যাবে।


বায়রার নেতা খন্দকার আবু আশফাক বলেন, একটা-একটা করে সব নিয়োগপত্র সত্যায়ন করতে গেলে অনেক সময় লেগে যায়। সত্যায়নের প্রক্রিয়া আগের নিয়মে ফেরালে কর্মী পাঠানো সহজ হবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবার যেন চক্র তৈরি না হয়, সেই অনুরোধ করা হয়েছে।


গত ২২ ডিসেম্বর থেকে কর্মী যাওয়ার ক্ষে‌ত্রে নতুন নিয়ম চালু করে সরকার। এতে একক ভিসার সত্যায়ন করতে হবে। একজন কর্মী থেকে ২৪ জন কর্মী পর্যন্ত যত ভিসা হয় সেই ভিসাকে একক ভিসা বলা হয়। আর ২৫ জন থেকে শুরু করে এর বেশি যত ভিসা হয় সেই ভিসা হলো গ্রুপ ভিসা। আগে ২৪টি পর্যন্ত নিয়োগপত্রে দূতাবাসে সত্যায়ন প্রয়োজন ছিল না। নতুন নিয়মে বেড়েছে দীর্ঘসূত্রতা। সময়মতো কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না।  


জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবে কর্মী যান ৪৪ হাজার ২২৯ জন। পরের মাসে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ হাজার ৫৮২ জনে। টানা তিন মাস কর্মী যাওয়ার এ ট্রেন্ড বজায় ছিল। চলতি বছর জানুয়ারিতে এটি কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৬১৮ জনে। আর ফেব্রুয়ারিতে সৌদি গেছেন ৪৪ হাজার ২৫৮ জন। 


এর আগে, একই দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন বায়রার সদস্যরা। এরপর তাদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি জমা দেন মন্ত্রণালয়ে। এতে তারা বলেন, মালয়েশিয়ার নাগরিক আমিন নূর ও তার বাংলাদেশি অংশীদার রুহুল আমিন ওরফে স্বপনের সিন্ডিকেট প্রত্যেক কর্মী থেকে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা করে অবৈধ চাঁদাবাজি করেছে। আবার যাতে কোনোভাবে সিন্ডিকেট তৈরি না হয়, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সিন্ডিকেটের মূল হোতা আমিন ও স্বপনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন