![]() |
জয়পুরহাটে প্রেমিকার বাড়িতে তিন দিন আটকে থাকা বগুড়ার সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার (সিএসডি)-এর খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আলী। |
জয়পুরহাটে প্রেমিকার বাড়িতে তিন দিন আটকে থাকার পর ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার হয়েছেন বগুড়ার সান্তাহার কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার (সিএসডি)-এর খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আলী। ঘটনাটি প্রকাশ্যে এলে দায়িত্বরত অবস্থায় কর্মস্থলে না থাকার দায়ে তাকে সান্তাহার থেকে পাবনায় বদলি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের সামন্তাহার গ্রামের এক নারীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ইউসুফ আলীর। চার বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বাড়ি ও অফিসে যাতায়াত ছিল দুজনেরই। গত ২২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) দুপুরে এক কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে ওই নারীর বাড়িতে যান ইউসুফ। এসময় বিয়ের দাবি তুললে ইউসুফ রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে বাড়িতে মানুষের ভিড় জমে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
তখন উৎসুক জনতা জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের থানায় নিতে চাইলে স্থানীয়রা বাধা দেন। পরের দিন বিষয়টি নিয়ে আবারও সমাধানের চেষ্টা করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। একপর্যায়ে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে সমাধান করতে চাইলে আপস করেননি নারী। স্থানীয় মোড়লরা আবারও পুলিশ ডাকেন। পরের দিন বুধবার রাত ১০টায় অভিযুক্ত ইউসুফ আলীর ভগ্নিপতি চাঁনমিয়ার অভিযোগের ভিক্তিতে একজন কিশোরীসহ তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন পুলিশ।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ইউসুফ আলীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক৷ তিনি আমার বাড়িতে বিয়ে করতে আসেন৷ দেনমোহর নিয়ে দরকষাকষির মাঝে প্রতিবেশীরা উপস্থিত হন। একপর্যায়ে তাদের হট্টগোলে বিয়ে না হয়ে বিষয়টি টাকার মাধ্যমে সমাধানের কথা ওঠে। স্থানীয় একজনের মাধ্যমে ১১ লাখ টাকা জোর করে আমাকে দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে নিয়ে যান। কিন্তু আমি টাকা নিতে রাজি হইনি, আমি বিয়ে করব।
এ বিষয়ে ইউসুফ আলী জানান, পরিচয়ের সুত্র ধরেই ওই নারী বিভিন্ন মাধ্যমে সমস্যা সৃষ্টি করতে থাকে। তখন আমি তার পরিবারের সাথে বসে বিরক্ত না করার জন্য বলতেই ক্ষেতলাল গিয়েছিলাম। সেখানে বিয়ের জন্য ওই নারী জোর করে। বিভিন্নভাবে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। সেইসাথে অফিসিয়ালভাবে শাস্তি তো পেয়ে গেলাম বলে জানান তিনি।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপেন্দ্র নাথ সিংহ জানান, অভিযোগের ভিক্তিতে সান্তাহারের খাদ্য বিভাগের সিএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ আলী উদ্ধার করে পরিবার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে অন্য কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
বগুড়ার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল কাবির খান মুঠোফোনে জানান, ২৪ ঘন্টা সান্তাহারের খাদ্য বিভাগে থাকার কথা থাকলেও ইউসুফ আলী কর্মস্থলে ছিলেন না, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে তাকে শোকজ করে পাবনায় বদলি করা হয়েছে এবং তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।